চেষ্টাটা প্রায় এক বছরের। অবশেষে করোনা টিকা উত্পাদন প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ল বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার চীন সরকার, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশে করোনার টিকা উৎপাদন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে
সেই সঙ্গে মাসে চার কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা ইনসেপ্টার রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।এ ক্ষেত্রে ইনসেপ্টা চীনের সিনোফার্ম থেকে করোনা টিকার কাঁচামাল এনে দেশে বোতালজাত করবে। সরকার সাশ্রয়ী দরে ওই টিকা ইনসেপ্টার কাছ থেকে কিনে নেবে। তবে এখনো দরদাম চূড়ান্ত হয়নি।গতকাল এসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এবং ইনসেপ্টার চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির। ঢাকা ও বেইজিংয়ে একযোগে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।
ঢাকা প্রান্তে রাজধানীর মহাখালীতে বিসিপিএস মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওই তিনজন ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহাবুবুর রহমান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন। চীনের প্রান্তে অন্যদের মধ্যে ছিলেন চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কনরেল জি রং, সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংজান ও সিনোফার্মের প্রধান প্রকৌশলী ফু কুয়াং।
অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, তিন মাসের মধ্যেই করোনার টিকা উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে ইনসেপ্টার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আর মাসে চার কোটি ডোজ টিকা উত্পাদনে ইনসেপ্টার সক্ষমতা রয়েছে। দামের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনো দরদাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে ইনসেপ্টার সঙ্গে এ নিয়ে আরেকটি চুক্তি হবে, আমরা সাশ্রয়ী মূল্যেই তা পাব।’ এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশে করোনার টিকায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে বলেছিলেন। সে জন্য যেখানে যা দরকার তিনি সেই উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই সমোঝাতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে এখন সেই উদ্যোগ এক ঐতিহাসিক রূপ লাভ করেছে। কারণ দেশে করোনার টিকা উত্পাদনের এই প্রথম উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু হলো।’ মন্ত্রী জানান, চীন থেকে এ পর্যন্ত সিনোফার্মের মোট এক কোটি ৩৫ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। আগামী ২০-২২ আগস্ট নাগাদ আরো ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। এ ছাড়া মাত্র কয়েক দিন আগে আরো ছয় কোটি ডোজ টিকা তাদের কাছ থেকে কেনার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে আমাদের কমপক্ষে ২৬ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। পরে আরো লাগতে পারে।
ফলে উত্পাদন ছাড়া এত চাহিদা পূরণ করা কঠিন এক বাস্তবতা। ফলে দেশেই টিকা উত্পাদন হলে দেশের চাহিদা পূরণের পর আমরা তা অন্য দেশকেও দিতে পারব। আর শুধু সিনোফার্ম বা চীনই নয়, রাশিয়াসহ আরো কিছু জায়গায় আমাদের যোগাযাগ চলছে। কারণ দেশে আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা টিকা উৎপাদনে সক্ষম।’ তিনি জানান, এ পর্যন্ত দেশে মোট টিকা এসেছে তিন কোটি ১০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে দুই কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। হাতে প্রায় এক কোটি ডোজ টিকা আছে। তবে মানুষকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের আরেক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে আমরা তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কো-অপারেশন অ্যান্ড পার্টনারশিপে যুক্ত হলাম দেশেই টিকা উত্পাদনের জন্য। এখন আর আমাদের টিকার কোনো সমস্যা হবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার অনেক দাম দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা এনে তা বিনা মূল্যে মানুষকে দিচ্ছে। কিন্তু এর গুরুত্ব মানুষকে বুঝতে হবে। শুধু টিকা দিলেই হবে না; যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ যেমন নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে, নিজেকে নিরাপদে রাখতে চায়
এই করোনা মহামারিও একটি যুদ্ধক্ষেত্র, এখানে প্রতিটি মানুষকে দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকে নিরাপদ রাখা, অন্যকে নিরাপদ রাখার জন্য।’ পরে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন রাশিয়ার টিকার ব্যাপারেও আমরা আরো পদক্ষেপ নেব। এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, আলাপ-আলোচনাও চলছে।
’ এদিকে অনুষ্ঠানে বক্তব্যদানকালে পরারাষ্ট্রসচিব চীনের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন শুধু কাঁচামালই নয়, সিনোফার্ম যেন ইনসেপ্টাকে ফর্মুলাও দিয়ে দেয়। তবেই অন্যান্য ভ্যাকসিন ও ওষুধের মতো দেশে খুব সহজেই অনেক বেশি টিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে উৎপাদন করা যাবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।